নীল তিমি (Balaenoptera musculus) পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাণী। এরা শুধু বর্তমান পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাণী নয়, বরং বিজ্ঞানীদের ধারণা, নীল তিমি সম্ভবত সর্বকালের সবচেয়ে বড় প্রাণী। এই বিশাল আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীটি মহাসাগরের বাসিন্দা। এদের জীবনযাত্রা, বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশের উপর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো:
নীল তিমি লম্বায় প্রায় ৩০ মিটার (৯৮ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে এবং এর ওজন হতে পারে প্রায় ২০০ টন। এদের দেহ লম্বাটে এবং পিঠের দিকটা ধূসর-নীল রঙের হয়ে থাকে, যা এদের নামের উৎস। পেটের দিকটা হালকা সাদা রঙের। এদের মুখটা বেশ চওড়া এবং মাথার উপরে শ্বাস নেওয়ার জন্য একটি ছিদ্র থাকে। এদের পাখনার আকৃতি লম্বা এবং সরু। নীল তিমি সাধারণত একা বা ছোট দলে চলাচল করে।
নীল তিমি সাধারণত গভীর সমুদ্রে বসবাস করে। এরা গ্রীষ্মকালে মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি শীতল জলে থাকে এবং শীতকালে প্রজননের জন্য উষ্ণ অঞ্চলে যায়। এদের প্রধান খাদ্য হলো ছোট চিংড়ি জাতীয় প্রাণী, যাদের ক্রিল বলা হয়। নীল তিমি দিনে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ক্রিল খেতে পারে। এরা মুখ হা করে জল ও ক্রিল একসঙ্গে গিলে ফেলে এবং তারপর মুখ বন্ধ করে জল বের করে দেয়, যা তাদের খাদ্য গ্রহণের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া।
নীল তিমি সাধারণত ৭-১০ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। স্ত্রী নীল তিমি প্রতি ২-৩ বছর অন্তর একটি করে বাচ্চা জন্ম দেয়। এদের গর্ভধারণকাল প্রায় ১০-১২ মাস। বাচ্চা জন্মের পর প্রায় ৬ মাস মায়ের দুধ পান করে। একটি নবজাতক বাচ্চার ওজন প্রায় ২.৫ টন এবং লম্বায় ৭-৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। নীল তিমি প্রায় ৮০-৯০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
নীল তিমি সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শব্দ ব্যবহার করে, যা অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। এরা দলবদ্ধভাবে চলাচল করতে পছন্দ করে, বিশেষ করে যখন তারা খাবার খোঁজে। নীল তিমি জলের উপরে উঠে শ্বাস নেয় এবং মাঝে মাঝে শরীরটাকে জলের উপরে তুলে খেলা করে, যা ‘ব্রিচিং’ নামে পরিচিত।
বর্তমানে নীল তিমি বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এদের প্রধান হুমকি হলো জলদূষণ, জাহাজের ধাক্কা এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এছাড়াও, অতীতে ব্যাপক হারে শিকার করার কারণে এদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। বর্তমানে এদের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে।