ক্যাপ্টেন জ্যাক কস্তো ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন কিংবদন্তী। তিনি ছিলেন একাধারে নৌ অফিসার, সমুদ্রবিজ্ঞানী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, উদ্ভাবক এবং লেখক। সমুদ্রের প্রতি তার অদম্য ভালোবাসা এবং গভীর অনুসন্ধিৎসা তাকে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে। কস্তো শুধু একজন নাবিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমুদ্রের একজন নীরব দূত।
জ্যাক কস্তো ১৯১০ সালের ১১ই জুন ফ্রান্সের গিরোন্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার সমুদ্রের প্রতি আকর্ষণ ছিল। তিনি ফরাসি নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের পর, তিনি সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধানের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন।
কস্তো সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধানের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তিনি “অ্যাকোয়া-লাং” নামক একটি শ্বাসযন্ত্র তৈরি করেন, যা ডুবুরিদের জলের নিচে দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে সাহায্য করত। এই আবিষ্কার সমুদ্র গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
কস্তো তার বিখ্যাত জাহাজ “RV Calypso” নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমুদ্র অভিযান চালান। তিনি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করেন। তার অনুসন্ধানের মাধ্যমে সমুদ্রের অনেক অজানা রহস্য উন্মোচিত হয়।
কস্তো শুধু একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি সমুদ্রের জীবন নিয়ে বেশ কিছু তথ্যচিত্র তৈরি করেন, যা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো মানুষকে সমুদ্রের সৌন্দর্য এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। “দ্য সাইলেন্ট ওয়ার্ল্ড” এবং “ওয়ার্ল্ড উইদাউট সান” তার বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কস্তো ছিলেন একজন উদ্ভাবক। তিনি সমুদ্র গবেষণার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করেন। তার উদ্ভাবিত “ডাইভিং সসার” নামক একটি ছোট ডুবোজাহাজ সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
কস্তো ছিলেন একজন পরিবেশবাদী। তিনি সমুদ্রের দূষণ এবং পরিবেশের উপর মানুষের কার্যকলাপের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন করেন। তিনি সমুদ্র সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ক্যাপ্টেন জ্যাক কস্তো ১৯৯৭ সালের ২৫শে জুন ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তিনি তার কাজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের সমুদ্রপ্রেমী, যিনি সমুদ্রের রহস্য উন্মোচন করতে এবং এর সংরক্ষণে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। কস্তোর কাজ আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং সমুদ্র গবেষণার পথ দেখায়।
জ্যাক কস্তো শুধু একজন নাবিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন বিজ্ঞানী এবং একজন পরিবেশকর্মী। সমুদ্রের প্রতি তার ভালোবাসা এবং কাজের প্রতি তার একাগ্রতা তাকে সর্বকালের সেরা নাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।