TheInfoPort
Mystery

সিকাডা ৩৩০১: ইন্টারনেটের সবচেয়ে রহস্যময় পাজল

Kaif hossain

২০১২ সালে ৪চ্যান ফোরামে একটি অদ্ভুত মেসেজ দেখা যায়: “Hello. We are looking for highly intelligent individuals.” এটি ছিল সিকাডা ৩৩০১ নামের রহস্যময় পাজলের শুরু। ইন্টারনেট ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল এই পাজল বিশ্বজুড়ে হাজারো মানুষ সমাধানের চেষ্টা করলেও, এর নির্মাতা বা উদ্দেশ্য আজও অজানা।


প্রথম ক্লু: যেখানে সব শুরু

২০১২ সালের জানুয়ারি মাস। ইন্টারনেটের একটা ফোরামে হঠাৎই একটা ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিটায় লেখা ছিল, “Hello. We are looking for highly intelligent individuals.” সাথে একটা জটিল কোড (code) দেওয়া ছিল। এই কোডটা ছিল একটা সাইফার (cipher), মানে এমন একটা গোপন বার্তা যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ডিকোড (decode) করলে বোঝা সম্ভব।

এই কোডটা সমাধান করার পর, মানুষজন আরও অনেকগুলো পাজলের সম্মুখীন হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল গান, কবিতা, ছবি, এমনকি বাস্তব জগতের ক্লু (clue) যা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় লুকানো ছিল। যেমন, একবার একটা ক্লু লন্ডনের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় একটা পোস্টারে লুকানো ছিল!


র্যাবিট হোল: সিকাডা ৩৩০১ কেন এত মজাদার?

সিকাডা ৩৩০১ শুধু একটা সাধারণ পাজল ছিল না, এটা ছিল একাধারে ক্রিপ্টোগ্রাফি (cryptography), স্টেগানোগ্রাফি (steganography), সাহিত্য, সঙ্গীত এবং বাস্তব জীবনের স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট (scavenger hunt) এর মিশ্রণ।

  • ক্রিপ্টোগ্রাফি: এটা হলো গোপন বার্তা লুকানোর বিজ্ঞান। সিকাডা ৩৩০১ এর পাজলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমন হেক্স কোড (hex code), বেস৬৪ (Base64), এবং এমনকি প্রাচীন বইয়ের উদ্ধৃতি।

  • স্টেগানোগ্রাফি: এটা হলো ছবি বা অডিও ফাইলের মধ্যে গোপন বার্তা লুকানোর পদ্ধতি। সিকাডা ৩৩০১ এর কিছু ক্লু ছবির মধ্যে লুকানো ছিল, যা বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে খুলতে হতো।

  • বাস্তব জীবনের ক্লু: কিছু পাজল সমাধান করার পর, মানুষজনকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো, যেমন পার্ক, লাইব্রেরি, বা ঐতিহাসিক স্থান।

এই সবকিছু মিলিয়ে সিকাডা ৩৩০১ ছিল একটা গ্লোবাল এস্কেপ রুম (global escape room), যেখানে অংশগ্রহণকারীরা একসাথে কাজ করে রহস্য সমাধানের চেষ্টা করত।


তত্ত্বের ভিড়: সিকাডা ৩৩০১ এর পিছনে কে?

সিকাডা ৩৩০১ এর পিছনে কারা ছিল, তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। এখানে কিছু জনপ্রিয় তত্ত্ব দেওয়া হলো:

১. সরকারি সংস্থা: অনেকের ধারণা, এটা কোনো গোপন সরকারি সংস্থা যেমন সিআইএ (CIA) বা এনএসএ (NSA) এর একটা প্রকল্প ছিল, যারা হ্যাকার এবং ক্রিপ্টোগ্রাফারদের রিক্রুট করার চেষ্টা করছিল।

২. গোপন সংঘ: কিছু লোক মনে করে, এটা একটা আধুনিক বা গোপন সংঘের কাজ, যারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

৩. এআরজি (ARG): ARG মানে Alternate Reality Game, যা একটা ইন্টারেক্টিভ গেম যেখানে বাস্তব জীবন এবং ভার্চুয়াল জগত মিশে যায়। অনেকের মতে, সিকাডা ৩৩০১ ছিল একটা এআরজি, যা কিছু জিনিয়াস মানুষ তৈরি করেছিল শুধুমাত্র মজা করার জন্য।

৪. এলিয়েন: হ্যাঁ, কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, এটা এলিয়েনদের কাজ! কারণ, এর পাজলগুলো এতটাই জটিল ছিল যে, এটা মানুষের কাজ নয় বলে মনে হয়।


অদৃশ্য হওয়া: সিকাডা ৩৩০১ কেন হারিয়ে গেল?

২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সিকাডা ৩৩০১ মোট তিনবার পাজল প্রকাশ করে। এরপরই এটা হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায়। শেষ বার্তায় লেখা ছিল, “We want the best, not the followers.” মানে, “আমরা সেরাদের চাই, অনুসারীদের নয়।”

এই বার্তাটির মাধ্যমে বোঝা যায়, সিকাডা ৩৩০১ শুধুমাত্র সেরা এবং বুদ্ধিমান মানুষদের খুঁজছিল। কিন্তু তারা কি পেয়েছিল? কেউ জানে না।


লিগ্যাসি: সিকাডা ৩৩০১ এর প্রভাব

সিকাডা ৩৩০১ শুধু একটা পাজল ছিল না, এটা ইন্টারনেট সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেছে। এর প্রভাব দেখা যায় ক্রিপ্টোগ্রাফি, এআরজি, এবং অনলাইন কমিউনিটিতে।

  • এটা মানুষকে শিখিয়েছে কিভাবে জটিল সমস্যা সমাধান করতে হয়।

  • এটা প্রমাণ করেছে যে, ইন্টারনেট এখনও রহস্য এবং রোমাঞ্চে ভরা।

  • এটা একটা প্রশ্ন রেখে গেছে: “আমরা কি কখনো জানতে পারব সিকাডা ৩৩০১ এর আসল রহস্য?”


সিকাডা ৩৩০১ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই বিশ্বে এখনও অনেক রহস্য রয়েছে যা সমাধান করা বাকি। এটা শুধু একটা পাজল নয়, এটা একটা অভিজ্ঞতা যা মানুষকে একসাথে কাজ করতে শিখিয়েছে।

তাহলে, আপনি যদি সিকাডা ৩৩০১ এর পাজল সমাধান করার সুযোগ পেতেন, কি করতেন? চেষ্টা করতেন, নাকি প্রথম হেক্স কোড দেখেই পালাতেন?