TheInfoPort
space

মহাবিশ্বের রহস্য: ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি

Kaif hossain

আমাদের পরিচিত মহাবিশ্ব এক বিরাট রহস্যের ভাণ্ডার। আমরা যা দেখতে পাই, যেমন - তারা, গ্রহ, গ্যালাক্সি, এগুলো মহাবিশ্বের খুবই সামান্য অংশ। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন যে, মহাবিশ্বের প্রায় ৯৫% এমন কিছু দিয়ে গঠিত যা আমরা দেখতে পাই না, অনুভব করতে পারি না। এদের মধ্যে অন্যতম হল ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter) ও ডার্ক এনার্জি (Dark Energy)। এই প্রবন্ধে আমরা এই অদৃশ্য শক্তিগুলোর রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করব।

মহাবিশ্বের গঠন

মহাবিশ্বের গঠন বোঝার আগে আমাদের জানতে হবে এর উপাদানগুলো কী কী। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের উপাদানগুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন:

  • সাধারণ পদার্থ (Ordinary Matter): যা আমরা দেখতে পাই, যেমন - তারা, গ্রহ, ধুলিকণা, গ্যাস ইত্যাদি। এটি মহাবিশ্বের মাত্র ৫%।

  • ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter): এটি মহাবিশ্বের প্রায় ২৭%। এটি আলো প্রতিফলিত বা শোষণ করে না, তাই একে দেখা যায় না।

  • ডার্ক এনার্জি (Dark Energy): এটি মহাবিশ্বের প্রায় ৬৮%। এটি মহাবিশ্বের প্রসারণের জন্য দায়ী।

ডার্ক ম্যাটার: অদৃশ্য ভর

ডার্ক ম্যাটার হল এমন এক ধরনের পদার্থ যা আলোকের সাথে কোনো প্রকার বিক্রিয়া করে না। অর্থাৎ, এটি আলো শোষণ করে না, প্রতিফলিত করে না বা বিকিরণও করে না। তাই আমরা একে সরাসরি দেখতে পাই না। কিন্তু এর মহাকর্ষীয় প্রভাব আমরা অনুভব করতে পারি।

ডার্ক ম্যাটারের প্রমাণ

ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৩০ এর দশকে। জ্যোতির্বিদ ফ্রিৎস জুইকি (Fritz Zwicky) কোমা ক্লাস্টারের (Coma Cluster) গ্যালাক্সিগুলোর গতি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, গ্যালাক্সিগুলো এত দ্রুত গতিতে ঘুরছে যে তাদের নিজেদের মহাকর্ষীয় টানে একসাথে থাকার কথা নয়। এর থেকে তিনি ধারণা করেন যে, ক্লাস্টারে এমন কিছু অদৃশ্য পদার্থ আছে যার অতিরিক্ত মহাকর্ষীয় টানের কারণে গ্যালাক্সিগুলো একসাথে আছে।

আরও অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেমন - গ্যালাক্সির ঘূর্ণন গতি, মহাকর্ষীয় লেন্সিং (Gravitational Lensing) ইত্যাদি।

ডার্ক ম্যাটারের ভূমিকা

ডার্ক ম্যাটার গ্যালাক্সি এবং গ্যালাক্সিক্লাস্টার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মহাকর্ষীয় টানের মাধ্যমে সাধারণ পদার্থকে একত্রিত করে রাখে।

ডার্ক এনার্জি: রহস্যময় শক্তি

ডার্ক এনার্জি হল এমন এক প্রকার শক্তি যা মহাবিশ্বের প্রসারণকে ত্বরান্বিত করছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (General Theory of Relativity) অনুসারে, মহাবিশ্বের প্রসারণ ধীর হয়ে আসার কথা, কিন্তু ১৯৯০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, মহাবিশ্বের প্রসারণ আসলে দ্রুত হচ্ছে। এই ত্বরিত প্রসারণের কারণ হিসেবে ডার্ক এনার্জিকে দায়ী করা হয়।

ডার্ক এনার্জির প্রমাণ

সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ ছাড়াও, কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (Cosmic Microwave Background - CMB) এর পর্যবেক্ষণ থেকেও ডার্ক এনার্জির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

(কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড এর একটি চিত্র)

ডার্ক এনার্জির ভূমিকা

ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের প্রসারণের জন্য দায়ী। এটি মহাকর্ষীয় বলের বিপরীতে কাজ করে মহাবিশ্বকে প্রসারিত করছে।

ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির মধ্যে পার্থক্য

বৈশিষ্ট্যডার্ক ম্যাটারডার্ক এনার্জি
প্রকৃতিপদার্থশক্তি
প্রভাবমহাকর্ষীয় টানমহাকর্ষীয় বিকর্ষণ
ভূমিকাগ্যালাক্সি গঠনমহাবিশ্বের প্রসারণ

বর্তমান গবেষণা ও ভবিষ্যৎ

ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা করছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এদের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে এই গবেষণার মাধ্যমে মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে।

ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের অন্যতম বড় রহস্য। এদের সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই অদৃশ্য শক্তিগুলোর রহস্য উন্মোচন করতে পারলে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট হবে।