পৃথিবীর বাইরে আরও কত জগত রয়েছে তা জানার আগ্রহ মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে আকর্ষণ করেছে। সৌরজগৎ বা প্ল্যানেটারি সিস্টেমের গঠন ও বিবর্তন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি আমাদের মহাবিশ্বে প্রাণের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই প্রবন্ধে আমরা জানব কীভাবে তারা এবং তাদের সঙ্গী গ্রহগুলো গঠিত হয়।
তারার গঠন শুরু হয় মহাকাশের বৃহৎ মলিকুলার মেঘ থেকে। এই মেঘগুলো গ্যাস এবং ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে এই মেঘ সংকুচিত হয়ে এক বা একাধিক প্রোটোস্টার (প্রাথমিক তারকা) তৈরি করে। প্রোটোস্টার গঠনের সময় এর চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্যাস ও ধূলিকণার একটি ডিস্ক তৈরি হয়, যাকে প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক বলা হয়।
প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের প্রধান উপাদান হল হাইড্রোজেন গ্যাস, হিলিয়াম, এবং ধূলিকণা। এই ডিস্কের কেন্দ্রে থাকে গরম এবং ঘন অংশ যা পরে একটি তারকা হয়ে ওঠে। ডিস্কের বাইরের অংশে গ্যাস ও ধূলিকণা কম ঘন এবং ঠান্ডা থাকে।
গ্রহ গঠনের প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধাপে ঘটে।
প্রথম ধাপে, প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কে থাকা ছোট ছোট ধূলিকণা একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে বড় কণা তৈরি করে। এভাবে একসময় ১০০ কিলোমিটার বা তার চেয়েও বড় বস্তু তৈরি হয়, যাকে প্ল্যানেটেসিমাল বলা হয়।
প্ল্যানেটেসিমালগুলি একে অপরের সাথে সংঘর্ষ ও একীভূত হয়ে প্রোটোপ্ল্যানেট গঠন করে। এই প্রোটোপ্ল্যানেটগুলি একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করে আরও বড় হয়।
যেসব প্রোটোপ্ল্যানেট যথেষ্ট বড় হয়ে ওঠে, তারা চারপাশের গ্যাস শোষণ করে গ্যাস জায়ান্ট বা বৃহস্পতির মত গ্রহে পরিণত হয়।
প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের মধ্যে গ্রহের মাইগ্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তরঙ্গসৃষ্টির মাধ্যমে গ্রহগুলির কক্ষপথ পরিবর্তিত হতে পারে। গ্রহের কক্ষপথ স্থিতিশীল হওয়ার আগে তারা ডিস্কের মধ্যে স্থান পরিবর্তন করে।
একটি নির্দিষ্ট সময় পরে, প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের গ্যাস এবং ধূলিকণা তারার বিকিরণের প্রভাবে ছড়িয়ে যায়। তখন একটি পরিষ্কার এবং স্থিতিশীল সৌরজগৎ গঠন হয়। গ্রহগুলি তখন স্থিতিশীল কক্ষপথে অবস্থান করে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক পর্যবেক্ষণ করেন। আলমা টেলিস্কোপ এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে এই ডিস্কগুলির ছবি তোলা হয়েছে।
গ্রহ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বোঝার মাধ্যমে আমরা নতুন এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারে সহায়তা পাই। ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে আমরা আরও বিশদ তথ্য সংগ্রহ করতে পারব।
তারকা এবং প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক থেকে গ্রহ গঠনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং আকর্ষণীয়। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের মহাবিশ্বে নতুন গ্রহের সন্ধান এবং সেখানে প্রাণের সম্ভাবনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।