5G বা পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক হল বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উন্নত মোবাইল ইন্টারনেট প্রযুক্তি। আসুন জেনে নেই এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো কী।
5G কীভাবে কাজ করে?
5G নেটওয়ার্ক তিনটি প্রধান ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে:
লো-ব্যান্ড (Sub-6 GHz)
- 600-850 MHz ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে
- বেশি দূরত্বে সিগনাল পৌঁছাতে পারে
- ভবনের ভেতরেও সিগনাল ভালো থাকে
- গতি: 30-250 Mbps
মিড-ব্যান্ড (Sub-6 GHz)
- 2.5-3.7 GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে
- মাঝারি দূরত্বে কভারেজ দেয়
- গতি: 100-900 Mbps
হাই-ব্যান্ড (মিলিমিটার ওয়েভ)
- 24-47 GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে
- অত্যন্ত দ্রুত গতি
- খুব কম দূরত্বে কাজ করে
- গতি: 1-3 Gbps
5G-এর পরিকাঠামো
5G নেটওয়ার্ক তিনটি মূল অংশ নিয়ে গঠিত:
-
স্মল সেল টাওয়ার
- ছোট আকারের অ্যান্টেনা
- প্রতি 250-300 মিটার দূরত্বে স্থাপন করা হয়
- শহর এলাকায় ঘন ঘন বসানো হয়
-
মাস্ট অ্যান্টেনা
- বড় আকারের টাওয়ার
- বেশি এলাকা কভার করে
- গ্রামাঞ্চলে বেশি ব্যবহৃত
-
ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক
- টাওয়ারগুলোকে সংযুক্ত করে
- অত্যন্ত দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার
- কম লেটেন্সি
4G এবং 5G-এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য
গতি
- 4G: সর্বোচ্চ 1 Gbps
- 5G: সর্বোচ্চ 20 Gbps
লেটেন্সি
- 4G: 20-30 মিলিসেকেন্ড
- 5G: 1 মিলিসেকেন্ড
ডিভাইস কানেকশন
- 4G: প্রতি বর্গকিলোমিটারে 100,000 ডিভাইস
- 5G: প্রতি বর্গকিলোমিটারে 1 মিলিয়ন ডিভাইস
ফ্রিকোয়েন্সি
- 4G: 2-8 GHz
- 5G: 24-47 GHz (হাই-ব্যান্ড)
নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার
- 4G: বড় সেল টাওয়ার
- 5G: ছোট সেল + বিম-ফর্মিং
এনার্জি এফিসিয়েন্সি
- 4G: কম এনার্জি খরচ
- 5G: বেশি এনার্জি খরচ
ব্যবহার
- 4G: মূলত মোবাইল ইন্টারনেট
- 5G: IoT, স্মার্ট সিটি, রিমোট সার্জারি, AR/VR
5G-এর সুবিধাসমূহ
দ্রুত গতি
- সর্বোচ্চ ডাউনলোড স্পিড: 20 Gbps
- আপলোড স্পিড: 10 Gbps
- HD মুভি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ডাউনলোড
কম লেটেন্সি
- মাত্র 1 মিলিসেকেন্ড লেটেন্সি
- রিয়েল-টাইম গেমিং সম্ভব
- রিমোট সার্জারি করা যায়
বেশি ডিভাইস কানেকশন
- প্রতি বর্গকিলোমিটারে 1 মিলিয়ন ডিভাইস
- IoT ডিভাইসের জন্য উপযোগী
- স্মার্ট সিটি বাস্তবায়ন সহজ
5G-এর অসুবিধাসমূহ
খরচ
- নেটওয়ার্ক স্থাপনে বেশি খরচ
- 5G স্মার্টফোন দামি
- ইন্টারনেট প্যাকেজ বেশি দামি
কভারেজ সীমাবদ্ধতা
- শহর কেন্দ্রিক সেবা
- গ্রামাঞ্চলে সীমিত কভারেজ
- ভবনের দেয়াল ভেদ করে সিগনাল দুর্বল হয়
বিদ্যুৎ খরচ
- টাওয়ারগুলোর বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন
- স্মার্টফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়
- পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা
6G প্রযুক্তি: ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
6G প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে, যা 2030 সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার শুরু হতে পারে:
- সম্ভাব্য গতি: 1 টেরাবিট প্রতি সেকেন্ডে
- হলোগ্রাফিক যোগাযোগ সম্ভব হবে
- আরও কম লেটেন্সি (0.1 মিলিসেকেন্ড)
- সাবমারিন কমিউনিকেশন
- স্পেস-এয়ার-গ্রাউন্ড ইন্টিগ্রেটেড নেটওয়ার্ক
5G প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে এবং 6G-এর আগমনের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।
-
লেটেন্সি: ডেটা প্রেরণ থেকে গ্রহণ পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান
-
IoT: ইন্টারনেট অফ থিংস, যেখানে বিভিন্ন ডিভাইস ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে
-
মিলিমিটার ওয়েভ: অত্যন্ত উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ
-
স্মল সেল: ছোট আকারের সেলুলার টাওয়ার