লিথিয়াম ব্যাটারির গল্প শুরু হয়েছিল 1970-এর দশকে। এই যাত্রাপথ বেশ মজার এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ভরা। চলুন জেনে নেই কীভাবে এই অসাধারণ প্রযুক্তি আমাদের জীবনে এলো:
এম স্ট্যানলি উইটিংহাম 1976 সালে এক্সন কর্পোরেশনে কাজ করার সময় প্রথম লিথিয়াম ব্যাটারির ধারণা নিয়ে আসেন। তিনি টাইটানিয়াম ডাইসালফাইড ব্যবহার করে প্রথম লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি করেন। এটি ছিল একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ, কিন্তু ব্যাটারিটি ছিল অস্থির এবং বিপজ্জনক।
জন গুডইনাফ 1980 সালে লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড (LiCoO2) আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ভিত্তি। এই সময়ে আকিরা যোশিনো সোনি কর্পোরেশনে কাজ করতে থাকেন এবং কার্বন অ্যানোডের ধারণা নিয়ে আসেন।
1991 সালে সোনি প্রথম বাণিজ্যিক লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি বাজারে আনে। এই ব্যাটারি প্রথমে সোনির হ্যান্ডিক্যাম ক্যামকর্ডারে ব্যবহৃত হয়। এরপর থেকে:
লিথিয়াম ব্যাটারি হল পুনঃচার্জযোগ্য ব্যাটারির একটি উন্নত প্রজন্ম, যা লিথিয়াম আয়নের চলাচলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় এবং মুক্ত করে। একটি লিথিয়াম ব্যাটারির চারটি মূল উপাদান রয়েছে:
ক্যাথোড: ধনাত্মক টার্মিনাল, সাধারণত লিথিয়াম মেটাল অক্সাইড দিয়ে তৈরি
অ্যানোড: ঋণাত্মক টার্মিনাল, প্রধানত গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি
ইলেকট্রোলাইট: লিথিয়াম আয়ন পরিবহনকারী তরল বা জেল
সেপারেটর: ক্যাথোড এবং অ্যানোড পৃথক করে শর্টসার্কিট প্রতিরোধ করে
লিথিয়াম ব্যাটারি দুটি প্রধান প্রক্রিয়ায় কাজ করে:
চার্জিং: যখন ব্যাটারি চার্জ হয়, লিথিয়াম আয়ন ক্যাথোড থেকে অ্যানোডে যায়। এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
ডিসচার্জিং: ব্যবহারের সময় লিথিয়াম আয়ন অ্যানোড থেকে ক্যাথোডে ফিরে আসে, যা রাসায়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকার
উচ্চ শক্তি ঘনত্ব: 150-200 Wh/kg
জীবনকাল: 500-1500 চার্জ সাইকেল
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটে ব্যবহৃত
নমনীয় আকার
হালকা ওজন
ড্রোন এবং পাতলা ডিভাইসে ব্যবহৃত
অপেক্ষাকৃত দামি
অধিক নিরাপদ
দীর্ঘ জীবনকাল: 2000+ চার্জ সাইকেল
ইলেক্ট্রিক গাড়ি এবং সোলার স্টোরেজে ব্যবহৃত
স্মার্টফোন: একটি আধুনিক স্মার্টফোনে 3000-4500 mAh ক্ষমতার ব্যাটারি থাকে
ল্যাপটপ: 45-100 Wh ক্ষমতার ব্যাটারি সাধারণ
ট্যাবলেট এবং স্মার্টওয়াচ
টেসলা মডেল 3: 50-82 kWh ব্যাটারি প্যাক
চার্জিং সময়: দ্রুত চার্জারে 30 মিনিটে 80% চার্জ সম্ভব
গড় রেঞ্জ: 300-500 কিলোমিটার
বড় আকারের ব্যাটারি ব্যাংক: 100 MWh পর্যন্ত ক্ষমতা
নবায়নযোগ্য শক্তি সংরক্ষণে ব্যবহৃত
পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেম
উচ্চ শক্তি ঘনত্ব
দীর্ঘ জীবনকাল
কম রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন
দ্রুত চার্জিং সক্ষমতা
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিপজ্জনক
শর্টসার্কিটের ঝুঁকি
অতিরিক্ত চার্জিং/ডিসচার্জিং ক্ষতিকারক
ইলেকট্রোড তৈরি
সেল অ্যাসেম্বলি
ইলেকট্রোলাইট ভরণ
পরীক্ষা এবং প্যাকেজিং
2024 সালে গড় খরচ: $130/kWh
2030 সালের লক্ষ্যমাত্রা: $60/kWh
খরচের 40% কাঁচামাল
লিথিয়াম খনন: প্রতি টন ব্যাটারিতে 2000 লিটার পানি প্রয়োজন
ভূগর্ভস্থ জলের প্রভাব
জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতি
বর্তমানে 5% ব্যাটারি রিসাইকেল হয়
2030 সালের লক্ষ্যমাত্রা: 40% রিসাইক্লিং
নতুন রিসাইক্লিং প্রযুক্তি বিকাশমান
ঠোস-স্টেট ব্যাটারি
লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি
নতুন ক্যাথোড উপাদান
2024: $50 বিলিয়ন বাজার মূল্য
2030 প্রক্ষেপণ: $200 বিলিয়ন
চীন বাজারের 70% নিয়ন্ত্রণ করে
লিথিয়াম ব্যাটারি আধুনিক প্রযুক্তির একটি অপরিহার্য অংশ। এর উন্নয়ন ও গবেষণা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও দক্ষ, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি প্রযুক্তি আসবে। তবে পরিবেশগত প্রভাব কমানো এবং রিসাইক্লিং বাড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।