মাইক্রোওভেন আধুনিক রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে, যা খাবার গরম করা এবং রান্না করা অত্যন্ত দ্রুত এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কীভাবে এই যন্ত্রটি আপনার খাবার এত দ্রুত গরম করে? চলুন সহজ ভাষায় বুঝে নেওয়া যাক।
মাইক্রোওভেনের আবিষ্কার একটি আকস্মিক ঘটনা। ১৯৪৫ সালে আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার পার্সি স্পেন্সার রাডার সম্পর্কিত গবেষণা করার সময় লক্ষ্য করেন যে তার পকেটে থাকা চকলেট বার গলে গেছে। তিনি বুঝতে পারেন যে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন এই তাপ উৎপন্ন করেছে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি মাইক্রোওভেনের ধারণা নিয়ে আসেন। ১৯৪৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিক মাইক্রোওভেন বাজারে আসে, যা ছিল বিশাল আকারের এবং খুবই ব্যয়বহুল। সময়ের সাথে সাথে এটি ছোট, সাশ্রয়ী এবং ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে।
মাইক্রোওভেন একটি রান্নার যন্ত্র যা মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ব্যবহার করে খাবার গরম করে। সাধারণ ওভেনের মতো যেখানে খাবার বাইরে থেকে গরম হয়, মাইক্রোওভেন খাবার ভিতর থেকে গরম করে। এজন্যই আপনার বাসি খাবার মিনিটের মধ্যে গরম হয়ে যায়।
১. ম্যাগনেট্রন:
মাইক্রোওভেনের মূল অংশ হলো ম্যাগনেট্রন। এটি বৈদ্যুতিক শক্তিকে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনে রূপান্তর করে। মাইক্রোওয়েভ মূলত উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ।
২. মাইক্রোওয়েভ এবং খাবার:
এই মাইক্রোওয়েভগুলি খাবারের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। মাইক্রোওয়েভ খাবারের পানির অণু, চর্বি এবং শর্করাকে উত্তেজিত করে। যখন এই অণুগুলি মাইক্রোওয়েভ শক্তি শোষণ করে, তারা দ্রুত কম্পন শুরু করে এবং ঘর্ষণের মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়াকে ডাইইলেক্ট্রিক হিটিং বলা হয়।
৩. সমানভাবে রান্না:
মাইক্রোওভেনের ভিতরের টার্নটেবল খাবারকে ঘুরিয়ে দেয়, যাতে মাইক্রোওয়েভগুলি খাবারকে সমানভাবে গরম করতে পারে। টার্নটেবল না থাকলে খাবারের কিছু অংশ গরম এবং কিছু অংশ ঠাণ্ডা থাকত।
৪. সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য:
মাইক্রোওভেন সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়। দরজার ধাতব জাল মাইক্রোওয়েভ বাইরে বের হতে দেয় না, এবং দরজা খোলা থাকলে ওভেনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাইক্রোওয়েভ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
মাইক্রোওভেন শক্তির দিক থেকে খুবই দক্ষ, কারণ এটি সরাসরি খাবার গরম করে, আশেপাশের বাতাস নয়। এই গরম করার পদ্ধতি সময় এবং শক্তি বাঁচায়।
প্রথম মাইক্রোওভেনের দাম ছিল প্রায় ৫,০০০ ডলার (আজকের মূল্যে প্রায় ৬০,০০০ ডলার) এবং এটি প্রায় ৩৪০ কিলোগ্রাম ওজনের ছিল!
১৯৭০-এর দশকে মাইক্রোওভেন ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০% ঘরোয়া রান্নাঘরে মাইক্রোওভেন রয়েছে।
মাইক্রোওভেনে পপকর্ন বানানো সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহারগুলোর মধ্যে একটি।
রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তা: অনেকেই মাইক্রোওভেনের রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। তবে মাইক্রোওভেনে ব্যবহৃত রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং, অর্থাৎ এটি ডিএনএ ক্ষতি বা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে না।
পুষ্টির ক্ষতি: সব রান্নার পদ্ধতিতেই কিছু পুষ্টি হারায়, তবে মাইক্রোওভেনে রান্না করা পুষ্টি সংরক্ষণের জন্য ভালো, কারণ এটি অল্প সময়ে রান্না করে।
মাইক্রোওভেন-সেইফ পাত্র ব্যবহার করুন যাতে গলে না যায় বা রাসায়নিক না ছড়ায়।
খাবার সমানভাবে গরম করতে মাঝেমাঝে নাড়ুন বা ঘুরিয়ে দিন।
খাবার আর্দ্র রাখতে এবং দ্রুত রান্না করতে ঢাকনা ব্যবহার করুন।