James Webb Space Telescope (JWST) হলো মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত এই টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বের গভীরে দৃষ্টি রাখতে এবং মহাজাগতিক রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করছে। এটি NASA, European Space Agency (ESA) এবং Canadian Space Agency (CSA)-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:
বৃহৎ আয়না: এর প্রধান আয়নাটির ব্যাস ৬.৫ মিটার, যা হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বড়। এই বিশাল আয়না বেশি আলো সংগ্রহ করতে পারে, ফলে দূরের এবং অস্পষ্ট বস্তুও দেখা সম্ভব হয়।
ইনফ্রারেড ভিউ: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মূলত ইনফ্রারেড আলোতে কাজ করে। ইনফ্রারেড আলো মহাবিশ্বের ধুলো এবং গ্যাসের মেঘ ভেদ করে যেতে পারে, যা দৃশ্যমান আলোতে দেখা সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সেই সব অঞ্চলে দেখতে পান, যা আগে অস্পষ্ট ছিল।
উচ্চ সংবেদনশীলতা: এই টেলিস্কোপটি অত্যন্ত সংবেদনশীল, যা দুর্বল আলো সনাক্ত করতে পারে। এর ফলে মহাবিশ্বের প্রথম দিকের নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সিগুলো পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়।
সূর্যরশ্মি প্রতিরোধক: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে একটি বিশাল সানশিল্ড রয়েছে, যা সূর্যের আলো এবং তাপ থেকে টেলিস্কোপকে রক্ষা করে। এই সানশিল্ড পাঁচটি স্তর দিয়ে তৈরি, যা টেলিস্কোপের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে (-২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রাখতে সাহায্য করে।
এই টেলিস্কোপের প্রধান লক্ষ্যগুলো হলো:
মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের একদম প্রথম দিকের নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সিগুলো দেখতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন কিভাবে প্রথম নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি গঠিত হয়েছিল।
গ্যালাক্সির গঠন এবং বিবর্তন: এটি গ্যালাক্সিগুলোর গঠন, বিবর্তন এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক জানতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন কিভাবে গ্যালাক্সিগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
নক্ষত্রের জন্ম এবং গ্রহের গঠন: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নক্ষত্রের জন্ম এবং গ্রহের গঠন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন কিভাবে নক্ষত্র এবং গ্রহগুলো তৈরি হয় এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী।
গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং জীবনের সম্ভাবনা: এই টেলিস্কোপটি অন্য নক্ষত্রের চারপাশে থাকা গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করবে এবং সেখানে জীবনের সম্ভাবনা আছে কিনা, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণের পর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো:
প্রাচীন গ্যালাক্সির সন্ধান: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের প্রাচীনতম গ্যালাক্সিগুলোর সন্ধান পেয়েছে, যা বিগ ব্যাং-এর কয়েক মিলিয়ন বছর পরে তৈরি হয়েছিল।
গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলের অস্তিত্ব: এটি বেশ কয়েকটি এক্সোসোলার গ্রহে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে, যা ভবিষ্যতে প্রাণের সন্ধানে সহায়ক হতে পারে।
নক্ষত্রের জন্ম প্রক্রিয়ার নতুন তথ্য: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নক্ষত্রের জন্ম প্রক্রিয়ার অনেক নতুন তথ্য দিয়েছে, যা নক্ষত্র গঠন সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করেছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বের অনেক অজানা রহস্য উন্মোচনে সাহায্য করছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এটি মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।