আপনি যখন কম্পিউটার চালু করেন, তখন স্ক্রিনে যা দেখতে পান - সেই উইন্ডোজ বা ম্যাক ইন্টারফেস, তা হল অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু এর কাজ শুধু দৃশ্যমান ইন্টারফেস দেখানো নয়। একটি অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটারের মস্তিষ্ক যা হার্ডওয়্যার (প্রসেসর, মেমরি, হার্ড ডিস্ক) এবং সফটওয়্যার (অ্যাপ্লিকেশন) এর মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণ হিসেবে ভাবুন, আপনার কম্পিউটার একটি অফিস। অপারেটিং সিস্টেম হল সেই অফিসের ম্যানেজার যে সব কাজের সমন্বয় করে - কে কোন কাজ করবে, কখন করবে, কীভাবে করবে।
প্রধান তিন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম:
এটি একটি মজার প্রশ্ন। আসলে, লিনাক্স মূলত একটি কার্নেল - অপারেটিং সিস্টেমের মূল অংশ। কার্নেল হল সেই সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যখন আমরা “লিনাক্স” বলি, তখন সাধারণত পুরো অপারেটিং সিস্টেমকেই বোঝাই - যা জিএনইউ/লিনাক্স নামেও পরিচিত।
একটি সহজ উদাহরণ দিই। ধরুন, কার্নেল হল গাড়ির ইঞ্জিন। কিন্তু শুধু ইঞ্জিন দিয়ে গাড়ি চলে না - বডি, চাকা, স্টিয়ারিং সবই লাগে। তেমনি, লিনাক্স কার্নেলের সাথে অন্যান্য সফটওয়্যার যোগ করে পূর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি হয়।
1991 সালে, ফিনল্যান্ডের একজন ছাত্র লিনাস টরভাল্ডস একটি হবি প্রজেক্ট হিসেবে লিনাক্স তৈরি শুরু করেন। তিনি ইন্টারনেটে পোস্ট করেন: “আমি একটি (ফ্রি) অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছি। এটা শুধু একটা হবি, বড় বা প্রফেশনাল কিছু হবে না…”
কিন্তু তার এই “হবি প্রজেক্ট” আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার প্রজেক্টে পরিণত হয়েছে। কারণ এটি ওপেন সোর্স যার মানে যে কেউ এর কোড দেখতে, পরিবর্তন করতে এবং নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারে।
উইন্ডোজের জন্য আপনাকে হাজার টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু লিনাক্স সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। শুধু তাই নয়, আপনি চাইলে এটিকে পরিবর্তন করে নিজের মতো করে নিতে পারেন।
লিনাক্সে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি অনেক কম। কারণ:
লিনাক্সে আপনি সবকিছু নিজের পছন্দমতো সাজাতে পারেন। ডেস্কটপের চেহারা থেকে শুরু করে সিস্টেমের গভীর সেটিংস পর্যন্ত সব পরিবর্তনযোগ্য।
পুরনো কম্পিউটারেও লিনাক্স ভালোভাবে চলে। কারণ এটি কম্পিউটারের রিসোর্স (মেমরি, প্রসেসর) কম ব্যবহার করে।
অনেক জনপ্রিয় সফটওয়্যার (যেমন অ্যাডোব ফটোশপ, মাইক্রোসফট অফিস) লিনাক্সে চলে না। তবে বিকল্প সফটওয়্যার আছে (জিম্প, লিব্রেঅফিস)।
যদিও স্টিম এবং প্রোটন এর মাধ্যমে অনেক গেম এখন লিনাক্সে চলে, তবুও গেমিং এর জন্য উইন্ডোজই এখনো সেরা।
নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য লিনাক্স শেখা একটু কঠিন হতে পারে। কমান্ড লাইন ব্যবহার করতে হয় অনেক সময়।
ডেস্কটপ কম্পিউটারে:
কিন্তু সার্ভার এবং সুপার কম্পিউটারে লিনাক্স এর ব্যবহার সর্বাধিক। এন্ড্রয়েড ফোনও লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা লিনাক্স পছন্দ করেন কারণ:
লিনাক্স শুধু একটি অপারেটিং সিস্টেম নয়, এটি একটি দর্শন - যেখানে সফটওয়্যার মুক্ত এবং সবার জন্য উন্মুক্ত। যদিও ডেস্কটপে এর ব্যবহার কম, কিন্তু ইন্টারনেট, ক্লাউড কম্পিউটিং, এবং মোবাইল ফোনের পেছনে লিনাক্স এর অবদান অপরিসীম।
নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য উবুন্টু বা মিন্ট লিনাক্স দিয়ে শুরু করা ভালো। এগুলো উইন্ডোজের মতো সহজ ইন্টারফেস দেয় এবং ব্যবহার করা সহজ।