TheInfoPort
সাইবার নিরাপত্তা

হ্যাকিং থেকে নিজেকে বাঁচানোর কিছু উপায়

হ্যাকিং একটি গুরুতর সমস্যা, যা আপনার ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্য চুরি করতে পারে। হ্যাকাররা বিভিন্ন উপায়ে আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে, তাই আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আলোচনা করা হলো, যা আপনাকে হ্যাকিং থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে:

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

দুর্বল পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে ঢোকা অনেক সহজ করে দেয়। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখুন:

  • কমপক্ষে ১২টি অক্ষর ব্যবহার করুন।
  • বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন (!@#$) এর মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
  • ব্যক্তিগত তথ্য যেমন আপনার নাম, জন্ম তারিখ বা ফোন নম্বর ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না।

পাসওয়ার্ড মনে রাখার জন্য একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। LastPass, 1Password-এর মতো অনেক নির্ভরযোগ্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার রয়েছে।

টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) ব্যবহার করুন

টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন আপনার অ্যাকাউন্টে সুরক্ষার একটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করে। এটি চালু করলে, পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি আপনার মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ডিভাইসে পাঠানো একটি কোড প্রবেশ করতে হবে। যদি হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জেনেও যায়, তবুও তারা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ তাদের কাছে আপনার ডিভাইসে পাঠানো কোড থাকবে না। Google Authenticator, Authy-এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য 2FA চালু করতে পারেন।

আপনার সফটওয়্যার আপডেট রাখুন

সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো নিয়মিতভাবে তাদের সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সমাধান করার জন্য আপডেট বের করে। এই আপডেটগুলি ইনস্টল না করলে, হ্যাকাররা সেই ত্রুটিগুলির সুযোগ নিতে পারে। আপনার অপারেটিং সিস্টেম (Windows, macOS, Linux), ওয়েব ব্রাউজার (Chrome, Firefox, Safari) এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনগুলি সর্বদা আপ-টু-ডেট রাখুন। স্বয়ংক্রিয় আপডেট চালু করার অপশন থাকলে, সেটি ব্যবহার করুন।

সন্দেহজনক ইমেল এবং লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন

ফিশিং ইমেলগুলি হ্যাকারদের একটি সাধারণ হাতিয়ার। তারা আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে। এই ধরনের ইমেলগুলিতে সাধারণত জরুরি বার্তা বা আকর্ষণীয় অফার থাকে। কোনো সন্দেহজনক ইমেল বা লিঙ্কে ক্লিক করার আগে প্রেরকের পরিচয় যাচাই করুন এবং নিশ্চিত হন যে এটি একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে এসেছে। কোনো অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা বা কোনো ফাইল ডাউনলোড করা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন।

পাবলিক Wi-Fi ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন

পাবলিক Wi-Fi নেটওয়ার্কগুলি সাধারণত সুরক্ষিত থাকে না, তাই হ্যাকাররা সহজেই আপনার ডেটা ইন্টারসেপ্ট করতে পারে। পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করার সময় ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনাকে পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন। VPN আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিক এনক্রিপ্ট করে এবং আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখে।

ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন

ফায়ারওয়াল আপনার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মধ্যে একটি সুরক্ষা প্রাচীর তৈরি করে। এটি আপনার নেটওয়ার্কে আসা এবং যাওয়া ডেটা নিরীক্ষণ করে এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ সনাক্ত করলে তা ব্লক করে দেয়। Windows এবং macOS-এর মতো অপারেটিং সিস্টেমগুলিতে ফায়ারওয়াল থাকে। নিশ্চিত করুন যে আপনার ফায়ারওয়াল চালু আছে এবং সঠিকভাবে কনফিগার করা আছে।

নিয়মিত আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করুন

ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করে আপনার ডেটা চুরি করতে পারে বা আপনার সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একটি ভাল অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইনস্টল করুন এবং নিয়মিত আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করুন। Bitdefender, Norton, McAfee-এর মতো অনেক জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম রয়েছে।

আপনার ডেটা ব্যাকআপ রাখুন

হ্যাকিংয়ের শিকার হলে বা অন্য কোনো কারণে আপনার ডেটা হারিয়ে গেলে, ব্যাকআপ আপনাকে আপনার ডেটা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এবং ডেটা নিয়মিতভাবে একটি বাহ্যিক হার্ড ড্রাইভে বা ক্লাউড স্টোরেজে ব্যাকআপ করুন। Google Drive, Dropbox, iCloud-এর মতো ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবাগুলি স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপের সুবিধা দেয়।

সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সাবধান থাকুন

হ্যাকাররা প্রায়শই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল ব্যবহার করে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে প্রলুব্ধ করে। তারা আপনাকে ফোন করে বা ইমেল পাঠিয়ে কোনো কোম্পানির প্রতিনিধি বা পরিচিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। তাদের কথায় বিশ্বাস করে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সবসময় তথ্যের উৎস যাচাই করুন এবং নিশ্চিত হন যে আপনি কার সাথে কথা বলছেন।

উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার অনলাইন নিরাপত্তা বাড়াতে পারেন এবং হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমাতে পারেন। মনে রাখবেন, নিরাপত্তা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর জন্য ক্রমাগত সতর্কতা এবং মনোযোগ প্রয়োজন।