TheInfoPort
health

ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে চোখের সুরক্ষা

STLRAxis Team

আধুনিক জীবনে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট এবং টিভির মতো ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে ডিজিটাল আই স্ট্রেন (Digital Eye Strain) বা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম (CVS) একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আর্টিকেল এ ডিজিটাল ডিভাইস থেকে চোখের সুরক্ষার কার্যকর টিপস নিয়ে আলোচনা করা হবে।


সমস্যা: ডিজিটাল আই স্ট্রেন কী এবং কেন হয়?

ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) এবং দীর্ঘক্ষণ একই ফোকাসে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের পেশিগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও, নিচের কারণগুলিও দায়ী:

  • অপর্যাপ্ত আলো: অতিরিক্ত উজ্জ্বল বা কম আলোয় কাজ করা।
  • স্ক্রিনের গ্লেয়ার: স্ক্রিনে প্রতিফলিত আলো চোখে চাপ সৃষ্টি করে।
  • অবস্থানগত ভুল: স্ক্রিনের দূরত্ব এবং কোণ ঠিক না থাকা।

লক্ষণসমূহ:

  • চোখে জ্বালা-পোড়া ও চুলকানি

  • মাথা ব্যথা

  • ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা

  • ফোকাস করতে সমস্যা

  • চোখ শুকনো হয়ে যাওয়া

  • ঝাপসা দৃষ্টি


সমাধান: চোখের সুরক্ষার ১০টি কার্যকর টিপস

১. ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন

প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ডের জন্য কমপক্ষে ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুতে তাকান। এটি চোখের পেশিকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে।

২. স্ক্রিনের ব্রাইটনেস এবং কন্ট্রাস্ট সামঞ্জস্য করুন

  • স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ঘরের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে নিন।
  • নাইট মোড বা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন (বিশেষ করে রাতে)।

৩. সঠিক দূরত্ব বজায় রাখুন

  • কম্পিউটার স্ক্রিন চোখ থেকে ২০-৩০ ইঞ্চি দূরে রাখুন।
  • মোবাইল ফোন চোখ থেকে ১৬-১৮ ইঞ্চি দূরে ধরুন।

৪. চোখের ব্যায়াম করুন

  • ফোকাস শিফটিং: আঙুলকে কাছে ও দূরে নিয়ে ফোকাস পরিবর্তন করুন।
  • চোখ ঘোরানো: চোখ বন্ধ করে গোলাকারে ঘোরান।

৫. ব্লিঙ্ক (পলক) বাড়ান

স্ক্রিনে কাজ করার সময় আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০% কম পলক ফেলি। প্রতি ১০ মিনিটে ১০ বার পলক ফেলার চেষ্টা করুন। শুষ্ক চোখের জন্য আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।

৬. এন্টি-গ্লেয়ার স্ক্রিন বা চশমা ব্যবহার করুন

  • কম্পিউটারের জন্য এন্টি-গ্লেয়ার স্ক্রিন প্রটেক্টর লাগান।
  • ব্লু লাইট ব্লকিং গ্লাসেস ব্যবহারে চোখের চাপ ৩০% কমে (স্টাডি অনুযায়ী)।

৭. কাজের পরিবেশ উন্নত করুন

  • ঘরের আলো স্ক্রিনের আলোর সমান রাখুন।
  • জানালার পাশে বসলে স্ক্রিনে সরাসরি সূর্যের আলো না পড়তে দিন।

৮. নিয়মিত চোখের চেকআপ

বছরে অন্তত একবার চোখের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। চশমার পাওয়ার ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হোন।

৯. খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ এবং ওমেগা-৩ যোগ করুন

  • গাজর, পালংশাক, মাছ, বাদাম চোখের রেটিনার জন্য উপকারী।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের শুষ্কতা কমায়।

১০. স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট

বাচ্চাদের জন্য দিনে ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রাপ্তবয়স্করাও কাজের ফাঁকে ব্রেক নিন।

পুষ্টির গুরুত্ব

চোখের সুস্থতার জন্য নিম্নলিখিত খাদ্য উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ:

  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন ই
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • জিংক
  • লুটিন এবং জিয়াজ্যানথিন

ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সম্পূর্ণ এড়ানো সম্ভব নয়, তবে উপরের টিপসগুলো মেনে চোখের ক্লান্তি কমানো যায়। মনে রাখবেন, চোখ আমাদের অমূল্য সম্পদ—এদের যত্ন নেওয়া জরুরি!

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো: আজ থেকেই একটি সুস্থ রুটিন শুরু করুন এবং চোখকে ডিজিটাল স্ট্রেস থেকে বাঁচান!