TheInfoPort
Tech

গুগলের বন্ধ হয়ে যাওয়া টপ প্রোডাক্টস

Kaif Hossain

গুগল শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, এটি একটি ইনোভেশন পাওয়ারহাউস। নতুন আইডিয়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে গুগল কখনো পিছপা হয় না। কিন্তু এই এক্সপেরিমেন্টের ফলাফল সবসময় সফল হয় না। গুগলের “প্রোডাক্ট গ্রেভইয়ার্ড” বা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রোডাক্টগুলোর তালিকা বেশ লম্বা। এই আর্টিকেলে আমরা গুগলের কিছু বিখ্যাত প্রোডাক্টের কথা জানব, যেগুলো একসময় বড় আশা নিয়ে লঞ্চ করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।


গুগলের প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ফিলোসফি

গুগলের মোটো হলো “ফেইল ফাস্ট, লার্ন ফাস্ট”। অর্থাৎ, দ্রুত ব্যর্থ হোন, দ্রুত শিখুন। গুগল নতুন আইডিয়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করে, কিন্তু যদি সেই প্রোডাক্ট মার্কেটে ঠিকভাবে রেসপন্স না পায়, তাহলে সেটি বন্ধ করতেও তাদের কোনো দ্বিধা নেই। এই ফিলোসফির কারণে গুগল অনেক ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট বাজারে এনেছে, আবার অনেকগুলোকে বন্ধও করেছে।

এই অ্যাপ্রোচের ভালো দিক হলো, গুগল সবসময় নতুন কিছু চেষ্টা করে। কিন্তু খারাপ দিক হলো, ব্যবহারকারীরা অনেক সময় তাদের পছন্দের প্রোডাক্ট হারায়। যেমন, গুগল রিডার বন্ধ হওয়ার পর অনেক ব্যবহারকারী হতাশ হয়েছিলেন।


গুগলের বন্ধ হয়ে যাওয়া টপ প্রোডাক্টস

এ. গুগল প্লাস (Google+)

ওভারভিউ: গুগল প্লাস ছিল ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার জন্য গুগলের একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। ২০১১ সালে লঞ্চ হওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারকারীদেরকে গ্রুপ, সার্কেল, এবং কমিউনিটির মাধ্যমে কানেক্ট করার সুযোগ দিত।

ব্যর্থতার কারণ:

  • ব্যবহারকারীদের আগ্রহের অভাব।
  • ফেসবুকের মতো ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস না থাকা।
  • ২০১৮ সালে একটি ডেটা ব্রিচ স্ক্যান্ডাল, যেখানে ৫ লাখ ইউজারের ডেটা লিক হয়েছিল।

ইমপ্যাক্ট: ২০১৯ সালে গুগল প্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বি. গুগল গ্লাস (Google Glass)

ওভারভিউ: গুগল গ্লাস ছিল অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি একটি স্মার্ট গ্লাস। এটি ২০১৩ সালে লঞ্চ হয় এবং টেক জায়ান্টের জন্য বড় আশা নিয়ে এসেছিল।

ব্যর্থতার কারণ:

  • উচ্চ মূল্য (প্রায় ১৫০০ ডলার)।
  • প্রাইভেসি কনসার্ন, কারণ এটি দিয়ে অন্যের ছবি বা ভিডিও তোলা সহজ ছিল।
  • লিমিটেড ফাংশনালিটি।
    ইমপ্যাক্ট: কনজিউমার মার্কেট থেকে গুগল গ্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে এন্টারপ্রাইজ মার্কেটে এটি এখনো ব্যবহার হচ্ছে।

সি. গুগল অ্যালো (Google Allo)

ওভারভিউ: গুগল অ্যালো ছিল একটি মেসেজিং অ্যাপ, যেখানে গুগলের AI-পাওয়ার্ড ফিচার ছিল। এটি ২০১৬ সালে লঞ্চ হয়।

ব্যর্থতার কারণ:

  • হোয়াটসঅ্যাপ এবং iMessage-এর সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া।
  • ইউজার অ্যাডপশনের অভাব।
    ইমপ্যাক্ট: ২০১৯ সালে গুগল অ্যালো বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং এর কিছু ফিচার গুগল মেসেজেসে ইন্টিগ্রেট করা হয়।

ডি. গুগল ওয়েভ (Google Wave)

ওভারভিউ: গুগল ওয়েভ ছিল একটি রিয়েল-টাইম কলাবোরেশন টুল, যেটি ইমেল, চ্যাট, এবং ডকুমেন্ট এডিটিংকে একসাথে নিয়ে এসেছিল। ২০০৯ সালে লঞ্চ হয়।

ব্যর্থতার কারণ:

  • ইউজারদের জন্য এটি ছিল জটিল এবং কনফিউজিং।
  • ক্লিয়ার ইউজ কেসের অভাব।
    ইমপ্যাক্ট: ২০১২ সালে গুগল ওয়েভ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে এর কিছু ফিচার গুগল ডকসে যুক্ত হয়।

ই. গুগল হ্যাঙ্গআউটস (Google Hangouts)

ওভারভিউ: গুগল হ্যাঙ্গআউটস ছিল একটি মেসেজিং এবং ভিডিও চ্যাট প্ল্যাটফর্ম। এটি ২০১৩ সালে লঞ্চ হয়।

ব্যর্থতার কারণ:

  • গুগল চ্যাট এবং গুগল মিটের সাথে প্রতিযোগিতা।
  • ফোকাসের অভাব।
    ইমপ্যাক্ট: ২০২৩ সালে গুগল হ্যাঙ্গআউটস সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এফ. গুগল রিডার (Google Reader)

ওভারভিউ: গুগল রিডার ছিল একটি RSS ফিড অ্যাগ্রিগেটর, যেটি ২০০৫ সালে লঞ্চ হয়।

ব্যর্থতার কারণ:

  • RSS ফিডের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া।
  • গুগলের প্রাইওরিটিজ পরিবর্তন।
    ইমপ্যাক্ট: ২০১৩ সালে গুগল রিডার বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং এটি অনেক লয়াল ইউজারকে হতাশ করে।

জি. গুগল স্টেডিয়া (Google Stadia)

ওভারভিউ: গুগল স্টেডিয়া ছিল একটি ক্লাউড গেমিং প্ল্যাটফর্ম, যেটি ২০১৯ সালে লঞ্চ হয়।

ব্যর্থতার কারণ:

  • উচ্চ খরচ।
  • লিমিটেড গেম লাইব্রেরি।
  • প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে টিকতে না পারা।
    ইমপ্যাক্ট: ২০২৩ সালে গুগল স্টেডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং ইউজারদেরকে রিফান্ড দেওয়া হয়।

গুগল কেন প্রোডাক্ট বন্ধ করে?

গুগল তার প্রোডাক্ট বন্ধ করার পেছনে কিছু কমন কারণ রয়েছে:

  • ইউজার অ্যাডপশনের অভাব: যদি প্রোডাক্টটি মার্কেটে ঠিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা না পায়।

  • প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া: যেমন গুগল অ্যালো হোয়াটসঅ্যাপের সাথে প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়।

  • স্ট্র্যাটেজিক শিফট: গুগলের প্রাইওরিটিজ পরিবর্তন হলে তারা প্রোডাক্ট বন্ধ করে।

  • উচ্চ মেইনটেনেন্স খরচ: গুগল স্টেডিয়ার মতো প্রোডাক্ট বন্ধ করার পেছনে এটি একটি বড় কারণ।


গুগলের ব্যর্থ প্রোডাক্ট থেকে শেখা

গুগলের ব্যর্থ প্রোডাক্টগুলো থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেসন শেখা যায়:

  • ইউজার ফিডব্যাক গুরুত্বপূর্ণ: ইউজারদের চাহিদা এবং ফিডব্যাক বোঝা জরুরি।

  • ফেইলিওর ইনোভেশনের অংশ: ব্যর্থতা ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়।

  • ব্যর্থতা থেকে শেখা: গুগল ওয়েভের মতো প্রোডাক্টের কিছু ফিচার পরবর্তীতে গুগল ডকসে যুক্ত হয়।


গুগলের ব্যর্থ প্রোডাক্টের লেগেসি

গুগলের ব্যর্থ প্রোডাক্টগুলো টেক ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে। যেমন, গুগল গ্লাসের টেকনোলজি এখন এন্টারপ্রাইজ মার্কেটে ব্যবহৃত হচ্ছে। গুগলের এই এক্সপেরিমেন্টেশন ফিলোসফি তাদেরকে জিমেইল, গুগল ম্যাপস, এবং ইউটিউবের মতো সফল প্রোডাক্ট দিয়েছে।


গুগলের ব্যর্থ প্রোডাক্টগুলো শুধু ব্যর্থতার গল্প নয়, এগুলো ইনোভেশন এবং রিস্ক নেওয়ার গল্প। গুগল প্রমাণ করেছে যে, ব্যর্থতা সাফল্যের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। টেক ইন্ডাস্ট্রিতে গুগলের এই অ্যাপ্রোচ সবসময় নতুন কিছু চেষ্টা করতে উৎসাহিত করে।

এই আর্টিকেলটি গুগলের বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রোডাক্টগুলোর ইতিহাস এবং এর পেছনের কারণগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। আশা করি, গুগলের ইনোভেশন এবং ব্যর্থতার গল্পগুলো আপনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে!