TheInfoPort
Tech

জেনারেটিভ এআই এবং চ্যাটজিপিটি

Kaif Hossain

আজকের দিনে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এবং জেনারেটিভ এআই নিয়ে চারদিকে আলোচনা। কিন্তু এই প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া জরুরি। আসুন প্রথমে জেনে নেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) কী, তারপর জেনারেটিভ এআই সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI কী?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল এমন একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা করার এবং শেখার ক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করে। এটি কম্পিউটার সিস্টেমকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যাতে তারা জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারে, প্যাটার্ন চিনতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

একটি সহজ উদাহরণ দিই। যখন আপনি আপনার স্মার্টফোনে মুখ দিয়ে আনলক করেন, সেটি AI ব্যবহার করে আপনার মুখ চিনে নেয়। যখন আপনি অনলাইন শপিং করেন, AI আপনার পছন্দের জিনিস সুপারিশ করে। এগুলো হল AI এর প্রাথমিক ব্যবহার।

জেনারেটিভ এআই কী?

জেনারেটিভ এআই হল AI এর একটি বিশেষ শাখা যা শুধু তথ্য বিশ্লেষণ করে না, বরং নতুন জিনিস তৈরি করতে পারে। এটি যেন একজন শিল্পীর মতো, যে শিখে এবং তার শেখা জ্ঞান থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করে।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। একটি সাধারণ AI সিস্টেম একটি ছবি দেখে বলতে পারে এটি কুকুর না বিড়াল। কিন্তু একটি জেনারেটিভ এআই আপনার বর্ণনা শুনে একটি সম্পূর্ণ নতুন ছবি তৈরি করতে পারে। একইভাবে, এটি লেখা, সঙ্গীত, কোড এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করতে পারে।

চ্যাটজিপিটি কী?

চ্যাটজিপিটি হল একটি উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল, যা ওপেনএআই (OpenAI) নামক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এটি মানুষের মতো কথা বলতে, লিখতে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। চ্যাটজিপিটি’র সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর স্বাভাবিক ভাষা বোঝার এবং উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা।

AI এবং জেনারেটিভ এআই এর মৌলিক পার্থক্য

আসুন একটি সহজ তুলনার মাধ্যমে পার্থক্যগুলো বুঝি:

সাধারণ AI:

  • একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য ডিজাইন করা (যেমন স্প্যাম ইমেইল সনাক্তকরণ)
  • “হ্যাঁ” বা “না” জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়
  • আগে থেকে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে
  • তথ্য বিশ্লেষণ ও শ্রেণিবিন্যাস করতে পারে

জেনারেটিভ এআই:

  • নতুন জিনিস তৈরি করতে পারে
  • সৃজনশীল কাজ করতে পারে
  • মানুষের সাথে স্বাভাবিক কথোপকথন করতে পারে
  • নতুন ধারণা ও সমাধান প্রস্তাব করতে পারে

জেনারেটিভ মডেল কীভাবে কাজ করে?

জেনারেটিভ মডেল একটি জটিল প্রযুক্তি, যা সহজ করে বললে এভাবে কাজ করে:

  1. শেখার পর্ব: প্রথমে মডেলকে বিশাল পরিমাণ তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন, বই, আর্টিকেল, ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত লেখা।

  2. প্যাটার্ন শনাক্তকরণ: মডেল এই তথ্যগুলো থেকে ভাষার প্যাটার্ন, নিয়ম এবং সম্পর্কগুলো শেখে।

  3. প্রেডিকশন: যখন আমরা কোনো প্রশ্ন করি, মডেল তার শেখা জ্ঞান ব্যবহার করে সবচেয়ে উপযুক্ত উত্তর তৈরি করে।

মূল প্রযুক্তি

জেনারেটিভ এআই’র মূল প্রযুক্তিগত দিকগুলো হল:

  • ট্রান্সফরমার আর্কিটেকচার: এটি একটি জটিল নিউরাল নেটওয়ার্ক, যা বড় পরিমাণ তথ্য প্রসেস করতে পারে।

  • বিশাল প্যারামিটার: চ্যাটজিপিটি’র মতো মডেলগুলোতে কোটি কোটি প্যারামিটার থাকে, যা এদের জটিল কাজ করার ক্ষমতা দেয়।

  • অটো-রিগ্রেসিভ লার্নিং: মডেল ধীরে ধীরে শব্দ যোগ করে বাক্য তৈরি করে, প্রতিটি নতুন শব্দ আগের শব্দগুলোর উপর নির্ভর করে।

জেনারেটিভ এআই’র প্রকারভেদ

  1. টেক্সট জেনারেশন:
  • চ্যাটবট
  • কন্টেন্ট রাইটিং
  • প্রোগ্রামিং কোড
  1. ইমেজ জেনারেশন:
  • আর্ট তৈরি
  1. অডিও জেনারেশন:
  • সঙ্গীত তৈরি
  • টেক্সট-টু-স্পীচ
  • ভয়েস ক্লোনিং
  1. ভিডিও জেনারেশন:
  • অ্যানিমেশন
  • ভিডিও এডিটিং
  • মোশন সিন্থেসিস

জেনারেটিভ এআই’র সুবিধাসমূহ

  1. দক্ষতা বৃদ্ধি: রুটিন কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারে।

  2. শিক্ষায় সহায়তা: ছাত্রদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে পারে।

  3. গবেষণা ও উন্নয়ন: নতুন আইডিয়া ও সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

  4. ভাষা বাধা দূর: বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ ও যোগাযোগে সহায়তা করে।

ঝুঁকি

  1. প্রাইভেসি ঝুঁকি: ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা।

  2. চাকরি হারানোর ভয়: কিছু পেশায় মানুষের চাকরি যেতে পারে।

  3. ভুল তথ্য: মডেল কখনও কখনও ভুল বা বানোয়াট তথ্য দিতে পারে।

  4. নৈতিক প্রশ্ন: এআই’র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন রয়েছে।

নতুন মডেল ও তাদের কার্যক্রম

  1. GPT-4: ওপেনএআই’র সর্বশেষ মডেল, যা আরও বুদ্ধিমান ও দক্ষ।

  2. DALL-E 3: টেক্সট থেকে ছবি তৈরি করে।

  3. Claude: Anthropic এর উন্নত চ্যাটবট।

  4. Gemini: Google’র উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিমোডাল মডেল।

জেনারেটিভ এআই একটি বিপ্লবী প্রযুক্তি, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে বদলে দিচ্ছে। এর সুবিধা ও ঝুঁকি দুটোই রয়েছে। সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এর সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারি।