TheInfoPort
Technology

কার্নেল কি? কার্নেলের প্রকারভেদ

STLRAxis Team

কার্নেল হল একটি অপারেটিং সিস্টেমের (OS) মূল অংশ। এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র স্থাপন করে। কার্নেল মূলত একটি প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের রিসোর্স যেমন - সিপিইউ (সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট), মেমরি এবং ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসগুলোর পরিচালনা করে। এটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলোকে হার্ডওয়্যারের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। কার্নেল ছাড়া কোনো অপারেটিং সিস্টেম কাজ করতে পারে না।

কার্নেলের কাজ কি?

কার্নেলের প্রধান কাজগুলো হলো:

  • প্রসেস ম্যানেজমেন্ট: কার্নেল বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রসেসগুলোর জন্য সিপিইউ সময় নির্ধারণ করে এবং সেগুলোর নির্বাহ (execution) নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মেমরি ম্যানেজমেন্ট: এটি র‍্যামের (RAM) ব্যবহার এবং ডেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
  • ডিভাইস ড্রাইভার: কার্নেল বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ডিভাইস যেমন - কীবোর্ড, মাউস, প্রিন্টার ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।
  • সিস্টেম কল: এটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলোকে কার্নেলের বিভিন্ন ফাংশন ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।

লিনাক্স কি কার্নেল নাকি অপারেটিং সিস্টেম?

লিনাক্স আসলে একটি কার্নেল। এটি একটি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম নয়। তবে, লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে অনেক অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, যেমন - উবুন্টু, ফেডোরা, অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি। এই অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে লিনাক্স কার্নেল ছাড়াও অন্যান্য সফটওয়্যার যেমন - গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI), সিস্টেম ইউটিলিটিস এবং অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম থাকে।

লিনাক্স কার্নেল একটি ওপেন সোর্স কার্নেল। এর মানে হল যে কেউ এটি ব্যবহার, পরিবর্তন এবং বিতরণ করতে পারে। লিনাক্সের এই বৈশিষ্ট্য এটিকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে।

কার্নেলের প্রকারভেদ

কার্নেল মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

  1. মনোলিথিক কার্নেল (Monolithic Kernel):
    • এই ধরনের কার্নেলে সমস্ত অপারেটিং সিস্টেম সার্ভিস, যেমন - প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, মেমরি ম্যানেজমেন্ট, ফাইল সিস্টেম, এবং ডিভাইস ড্রাইভার, একই অ্যাড্রেস স্পেসে কাজ করে।
    • এটি আকারে বড় এবং জটিল হয়ে থাকে।
    • উদাহরণ: লিনাক্স কার্নেল, উইন্ডোজ এনটি কার্নেল ইত্যাদি।
    • সুবিধা:
      • দ্রুত কাজ করে কারণ কার্নেলের মধ্যে বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ দ্রুত হয়।
      • কমপ্লেক্স সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত।
    • অসুবিধা:
      • কার্নেলের একটি অংশে সমস্যা হলে পুরো সিস্টেম ক্র্যাশ করতে পারে।
      • নতুন ফিচার যোগ করা বা পরিবর্তন করা কঠিন।
  2. মাইক্রোকার্নেল (Microkernel):
    • এই কার্নেলে শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিসগুলো থাকে, যেমন - প্রসেস ম্যানেজমেন্ট এবং মেমরি ম্যানেজমেন্ট।
    • অন্যান্য সার্ভিস যেমন - ফাইল সিস্টেম, ডিভাইস ড্রাইভার ইত্যাদি কার্নেলের বাইরে ইউজার স্পেসে কাজ করে।
    • এটি আকারে ছোট এবং সরল হয়ে থাকে।
    • উদাহরণ: QNX, MINIX ইত্যাদি।
    • সুবিধা:
      • কার্নেলের কোনো অংশে সমস্যা হলে পুরো সিস্টেম ক্র্যাশ করার সম্ভাবনা কম।
      • সহজে নতুন ফিচার যোগ করা বা পরিবর্তন করা যায়।
      • নিরাপত্তা বেশি।
    • অসুবিধা:
      • বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগের কারণে কর্মক্ষমতা কিছুটা কম হতে পারে।
      • সিস্টেম ডিজাইন করা কঠিন।

এই দুটি প্রধান প্রকারভেদ ছাড়াও আরও কিছু কার্নেল ডিজাইন রয়েছে, যেমন - হাইব্রিড কার্নেল। হাইব্রিড কার্নেল মনোলিথিক এবং মাইক্রোকার্নেলের কিছু বৈশিষ্ট্য একত্রিত করে।

কার্নেল কম্পিউটারের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি ছাড়া কোনো অপারেটিং সিস্টেম কাজ করতে পারে না। বিভিন্ন প্রকার কার্নেলের নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, যা অপারেটিং সিস্টেমের কর্মক্ষমতা এবং নকশাকে প্রভাবিত করে।