বর্তমান বিশ্বে Artificial Intelligence (AI) একটি আলোচিত বিষয়। AI আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলছে, একই সাথে এটি মানুষের কর্মসংস্থানের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। অনেকেই মনে করছেন AI হয়তো মানুষের জায়গা দখল করে নেবে এবং ভবিষ্যতে বহু মানুষ চাকরি হারাবে। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
AI নিঃসন্দেহে অনেক কাজ দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন - ডেটা এন্ট্রি, গ্রাহক পরিষেবা, এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে AI মানুষের চেয়েও বেশি কার্যকরী। এর কারণ হল AI ক্লান্তি ছাড়াই একটানা কাজ করতে পারে এবং মানুষের তুলনায় কম ভুল করে। কিন্তু AI -এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। মানুষের মতো সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং মানবিক অনুভূতি AI -এর নেই। তাই AI সম্পূর্ণরূপে মানুষের বিকল্প হতে পারবে না।
AI এবং Automation এর কারণে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র আলোচনা করা হলো:
ম্যানুফ্যাকচারিং (Manufacturing): অটোমেশন এবং রোবোটিক্সের কারণে কারখানার অনেক কাজ এখন AI -এর মাধ্যমে করা সম্ভব। এর ফলে শ্রমিকদের চাহিদা কমে যাচ্ছে।
ডাটা এন্ট্রি ও বিশ্লেষণ (Data Entry and Analysis): AI খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ডেটা এন্ট্রি ও বিশ্লেষণ করতে পারে। তাই এই কাজের জন্য এখন কম সংখ্যক মানুষের প্রয়োজন হয়।
গ্রাহক পরিষেবা (Customer Service): চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে গ্রাহক পরিষেবা দেওয়া এখন অনেক সহজ। এর ফলে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
পরিবহন (Transportation): সেলফ-ড্রাইভিং কার বা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ভবিষ্যতে ড্রাইভারের প্রয়োজন কমিয়ে দেবে।
ফাইন্যান্স (Finance): অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং এবং ফিনটেক সলিউশনগুলো আর্থিক খাতে অনেক কাজ অটোমেটেড করে দিয়েছে, যার ফলে কিছু ক্ষেত্রে কর্মীর প্রয়োজন হ্রাস পেয়েছে।
তবে AI শুধুমাত্র চাকরি কেড়ে নেবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। AI নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি করতে পারে। AI -কে কেন্দ্র করে নতুন শিল্প এবং ব্যবসার প্রসার ঘটছে, যেখানে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। কয়েকটি নতুন চাকরির ক্ষেত্র নিচে উল্লেখ করা হলো:
AI ডেভলপার ও ইঞ্জিনিয়ার (AI Developer & Engineer): AI সিস্টেম তৈরি, ডেভলপ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ AI ডেভলপার ও ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন।
ডেটা সায়েন্টিস্ট (Data Scientist): ডেটা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করার জন্য ডেটা সায়েন্টিস্টের চাহিদা বাড়ছে।
AI ট্রেইনার ও এক্সপ্লেইনার (AI Trainer & Explainer): AI সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং এর কার্যক্রম ব্যাখ্যা করার জন্য দক্ষ লোকের দরকার।
রোবোটিক্স টেকনিশিয়ান (Robotics Technician): রোবট তৈরি, পরিচালনা এবং মেরামতের জন্য রোবোটিক্স টেকনিশিয়ান প্রয়োজন।
AI -এর কারণে কর্মসংস্থানের যে পরিবর্তন আসছে, তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
নতুন দক্ষতা অর্জন (Upskilling): AI এবং টেকনোলজি সম্পর্কিত নতুন দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। প্রোগ্রামিং, ডেটা বিশ্লেষণ, মেশিন লার্নিংয়ের মতো বিষয়গুলো শিখে নিজেকে প্রস্তুত রাখা যায়।
সৃজনশীলতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ (Develop Creativity): AI যেখানে দুর্বল, সেই ক্ষেত্রগুলোতে নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে। সৃজনশীল কাজ, জটিল সমস্যা সমাধান এবং মানুষের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
জীবনব্যাপী শিক্ষা (Lifelong learning): সবসময় নতুন কিছু শেখার মানসিকতা রাখতে হবে। অনলাইন কোর্স, ওয়ার্কশপ এবং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখতে হবে।
নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন (Be unique): শুধুমাত্র গতানুগতিক কাজ না করে নিজের কাজের মাধ্যমে কিভাবে ভ্যালু তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।
AI আমাদের কর্মজীবনে পরিবর্তন আনবে, এটা নিশ্চিত। তবে সঠিক প্রস্তুতি এবং নতুন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে এই পরিবর্তনকে সুযোগে রূপান্তর করা সম্ভব।