সমুদ্র, যার বিশালতা এবং গভীরতা দুটোই মানুষের কল্পনার বাইরে। এই সমুদ্রের বুকে যুগে যুগে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা। বিজ্ঞান দিয়ে সব ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না, তেমনই কিছু অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আজকের আলোচনা।
১৮৭২ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর, আটলান্টিক মহাসাগরে একটি জাহাজ খুঁজে পাওয়া যায়, যার নাম ছিল মেরি সেলেস্ট। জাহাজটি স্বাভাবিকভাবে পাল তুলে চলছিল, কিন্তু জাহাজে কোনো মানুষ ছিল না। নাবিক, ক্যাপ্টেন বা কোনো যাত্রী, কেউই সেখানে উপস্থিত ছিল না। অথচ জাহাজের মালপত্র, খাবার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র অক্ষত ছিল। এমনকি নাবিকদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও সেখানে ছিল। এই ঘটনার কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি।
ফ্লাইং ডাচম্যান হল একটি কিংবদন্তি ভুতুড়ে জাহাজ। গল্প অনুসারে, ডাচ ক্যাপ্টেন ভ্যান ডার ডেকেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং শয়তানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। সেই কারণে, জাহাজটি অভিশপ্ত হয়ে যায় এবং অনন্তকাল ধরে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে থাকে। নাবিকরা প্রায়শই এই জাহাজটিকে কুয়াশার মধ্যে বা ঝড়ের সময় দেখতে পান বলে দাবি করেন। এই জাহাজ দেখা গেলে তা নাকি দুর্ভাগ্য ডেকে আনে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল, যা আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল। এই অঞ্চলে অনেক জাহাজ এবং বিমান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছে। কোনো ধ্বংসাবশেষ বা কোনো চিহ্ন ছাড়াই যেন তারা সমুদ্রের অতলে তলিয়ে গেছে। এই ঘটনার পেছনে অনেক রকমের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কেউ কেউ বলেন এখানে কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি কাজ করে, আবার কেউ কেউ বলেন এটি একটি সাধারণ ভৌগোলিক ঘটনা।
১৯৪৭ সালে, মালাক্কা প্রণালীতে এসএস ওরাং মেডান নামের একটি ডাচ জাহাজ খুঁজে পাওয়া যায়। জাহাজে থাকা সকল নাবিক এবং ক্রু-এর মৃতদেহ পাওয়া যায়, যাদের মুখ ছিল আতঙ্কে বিকৃত। মৃত্যুর কারণ আজও অজানা। কেউ কেউ বলেন জাহাজে কোনো বিষাক্ত গ্যাস ছিল, আবার কারও মতে এটি কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তির কাজ।
মাঝ সমুদ্রে অনেক সময় উজ্জ্বল আলো দেখা যায়, যা দেখলে মনে হয় যেন সমুদ্রের নিচ থেকে আলো আসছে। এই আলো কোথা থেকে আসে, তা আজও এক রহস্য। বিজ্ঞানীরা বলেন, এটি সমুদ্রের কিছু বিশেষ প্রাণীর কারণে হতে পারে, যাদের আলো তৈরি করার ক্ষমতা আছে। তবে এর পেছনে অন্য কোনো ব্যাখ্যাও থাকতে পারে।
সমুদ্রের এই অলৌকিক ঘটনাগুলো আজও মানুষের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করে। হয়তো বিজ্ঞান একদিন এই রহস্যগুলোর সমাধান করতে পারবে, কিন্তু আপাতত এগুলো রহস্য হয়েই থাকবে।